
শাহবাগে ফের কর্মবিরতি ট্রেইনি চিকিৎসকদের
যানজটে ভোগান্তি নগরবাসীর মাসিক ভাতা দ্বিগুণ করার দাবি
- আপলোড সময় : ২৩-১২-২০২৪ ০৪:৫৫:৪১ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৩-১২-২০২৪ ০৪:৫৫:৪১ অপরাহ্ন


মাসিক ভাতা ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার দাবিতে ফের কর্মবিরতি শুরু করেছেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা। এই দাবিতে গতকাল রোববার দুপুর দেড়টা থেকে শাহবাগের সড়কে অবস্থান নিয়ে চিকিৎসকরা বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেইনি চিকিৎসক মাহফুজুর রহমান বলেন, দাবি আদায় না হলে তারা শাহবাগে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। চিকিৎসদের অবস্থানের কারণে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই পয়েন্টে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খালিদ মনসুর। তিনি বলেন, দেড়টার দিকে চিকিৎসকরা শাহবাগ মোড় বন্ধ করে অবস্থান নিয়েছেন। আমরা কথা বলে তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। এর আগে সকাল থেকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় অবস্থান নিয়ে স্লোগান দেন প্রাইভেট পোস্টগ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি ডাক্তাররা। পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি চিকিৎসক জাবির হোসেন বলেন, আমরা ১২টা পর্যন্ত সময় দিয়েছিলাম সরকারকে। এখন সরকার যদি আমাদের সঙ্গে বসতে চায় তাহলে সেই দরজা খোলা। আর যদি বসতে না চায় তাহলে সমাধান হবে রাস্তায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের ছয় জনের একটি প্রতিনিধিদলকে ডাকা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন জাবির হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের ডেকেছে মন্ত্রণালয় থেকে, প্রতিনিধি দল নিয়ে আমরা সেখানে যাচ্ছি। ভাতা বাড়ানোর দাবিতে ২০২২ সাল থেকে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা। ২০২৩ সালের জুন মাসে এ দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন পাঁচ শতাধিক চিকিৎসক। এরপরও বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালের গেইটে, শাগবাগে এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান নিয়ে তারা বিক্ষোভ করেছেন, পালন করেছেন গণ অনশন কর্মসূচি। আন্দোলনের পর গত বছরের জুলাইয়ে পোস্টগ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট চিকিৎসকদের মাসিক ভাতা বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করার ঘোষণা দেয় তখনকার আওয়ামী লীগ সরকার। তবে ওই ভাতাও ‘যৌক্তিক নয়’ বলে দাবি করে আসছিলেন ট্রেইনি চিকিৎসকরা। এর আগে তারা ২০ হাজার টাকা ভাতা পেতেন। অন্তর্র্বতী সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবারও ভাতা বাড়ানোর দাবি নিয়ে ট্রেইনি চিকিৎসকদের আন্দোলন শুরু হয়। তারা বলছেন, ভাতা বাড়ানোর জন্য বিসিপিএস, বিএসএমএমইউ, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সবার সঙ্গে কথা বলেছেন তারা। সবাই ভাতা বৃদ্ধির দাবিকে ‘যৌক্তিক’ বলেছেন, এটি দ্রুত বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছেন। ভাতা বৃদ্ধির সুপারিশ অর্থ মন্ত্রণালয় পাঠানো হয়েছে বলেও জানিয়েছিলেন আন্দোলরত চিকিৎসকরা। কিন্তু সেখানে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। সেটি অনুমোদিত হয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েও আসেনি। গত ১৪ ডিসেম্বর ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস সোসাইটি শহীদ মিনার থেকে রাজু ভাস্কর্য পর্যন্ত মশাল মিছিল করে। সেদিন ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। পরদিন ১৫ ডিসেম্বর চিকিৎসকদের প্রতিনিধি, নাগরিক কমিটি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র সারজিস আলমসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানে নথিটি অনুমোদন দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা জানানো হয়। তবে সেটি আর হয়নি। তাই চিকিৎসকরা আবার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বলে জানিয়েছেন সভাপতি চিকিৎসক জাবির হোসেন। সরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে পোস্ট গ্রাজুয়েট চিকিৎসা উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি হাসপাতালের সেবা কার্যক্রমেও অংশ নেন। বিভিন্ন হাসপাতালে জরুরি বিভাগে রোগী ভর্তি, ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা, ছাড়পত্র দেওয়ার কাজটি করেন এসব চিকিৎসকরা। তাদের কর্মবিরতির কারণে হাসপাতালগুলোর কার্যক্রমে প্রভাব পড়ে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, ইনস্টিটিউটগুলো চলেই পোস্টগ্র্যাজুয়েটদের দিয়ে। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কাজে না থাকলে সেবা ব্যাহত হয়। তবে মেডিকেল কলেজে ইন্টার্ন থাকায় পোস্ট গ্র্যাজুয়েটরা কর্মবিরতিতে থাকলেও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়া যায়। বিএসএমএমইউর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. রেজাউর রহমান বলেন, শুনেছি কিছু চিকিৎসক কম এসেছে। তবে তারা না থাকায় হাসপাতালের কোনো বিভাগের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে বা স্থবির হয়ে গেছে এমন ঘটনা আমাকে এখন পর্যন্ত কেউ বলেনি। আমাদের এখানে এখনো তেমন প্রভাব পড়েনি।
যানজটে ভোগান্তি নগরবাসীর
ভাতা বাড়ানোর দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন ট্রেইনি চিকিৎসকরা। এতে করে আশপাশের এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। সায়েন্সল্যাব থেকে মতিঝিল, মতিঝিল থেকে ফার্মগেট চলাচলের সড়ক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই পথে যাতায়াতকারী সাধারণ মানুষ।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ